বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে অর্পিত দায়িত্বাবলী সম্পাদনের জন্য কমিশনের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন আইন ১৯৯২ এর ৫(১) নং ধারা অনুসারে একজন চেয়ারম্যান এবং অনূর্ধ্ব তিনজন সদস্য সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হয়। এছাড়া, কমিশনে ৪ (চার) জন যুগ্ম প্রধান, ১(এক) জন সচিব ও বিভিন্ন স্তরের ৩০ জন কর্মকর্তাসহ মোট ৩৯ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, ৪৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর এবং ৩৩ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনের শর্ত অনুসারে কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ ও কমিশনের সচিব সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন। কমিশনের নিয়োগবিধি অনুযায়ী যুগ্ম-প্রধান ও উপ-প্রধান পর্যায়ে ৫০% পদে সরকার প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগ করে থাকে এবং কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরাসরি/পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।
কমিশনের কার্যক্রম
১.বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রণীত ১৯৯২ সনের ৪৩নং আইনের ৭ ধারা মোতাবেক সরকারকে পরামর্শ প্রদান।
২.দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষা
কমিশন দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সুরক্ষা ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রমের আওতায় যৌক্তিক শুল্ক কাঠামো বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করে। সাধারণত প্রাথমিক কাঁচামালের জন্য নিম্নতম শুল্কহার, মাধ্যমিক পণ্য সামগ্রীর জন্য অপেক্ষাকৃত উচ্চ অথচ অভিন্ন শুল্কহার এবং সকল স¤পূর্ণায়িত পণ্যের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পণ্যে আরোপিত শুল্কহারের চেয়ে বেশী শুল্কহার আরোপের সূত্রাবলী কমিশন অনুসরণ করে। অধিকন্তু, দেশীয় শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্পের উৎপাদন ব্যয়, উৎপাদনশীলতা ও প্রাসংগিক তথ্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে সহায়তার মাত্রা নির্ণয় করা হয়।
৩.শিল্প-সম্পদ উৎপাদনে প্রতিযোগিতায় উৎসাহ প্রদান
কমিশন প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বাণিজ্য উদারীকরণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় রেখে শিল্প-স¤পদ উৎপাদনে প্রতিযোগিতায় উৎসাহ প্রদানের জন্য নীতি প্রণয়ন ও সুপারিশ করে থাকে।
৪.শিল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ
ধর্মীয়, স্বাস্থ্যগত, পরিবেশগত বা নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুসরণীয় আমদানি নিষেধাজ্ঞা ছাড়া অন্যান্য সকল পণ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে শুল্কায়নের মাধ্যমে আমদানি নিষেধাজ্ঞা বিলোপের নীতি কমিশন সমর্থন করে। কমিশন সাধারণভাবে দেশীয় উৎপাদনের অনুকূলে ৩০-৫০% কার্যকর সহায়তা দেয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে।
৫.দেশীয় পণ্য রপ্তানির উন্নয়ন
বাংলাদেশের এমন কোনো রপ্তানি পণ্য নেই যার আšতর্জাতিক বাজারের উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের কোনো রপ্তানি পণ্যের উপর করারোপ করা যুক্তিসংগত নয় বলে কমিশন মনে করে। অন্যদিকে, রপ্তানি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রপ্তানিপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে সকল প্রকার কর হ্রাস বা ক্ষেত্র বিশেষে মওকুফ করা উচিত বলে ট্যারিফ কমিশন মনে করে।
৬। দ্বি-পাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে দেশীয় শিল্প স¤পদ ব্যবহারের উন্নয়ন
ক.দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি
কোনো দেশের সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোন্ কোন ক্ষেত্রে সুবিধা চাওয়া যাবে সে ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধক্রমে কমিশন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণপূর্বক সুপারিশ প্রণয়ন করে থাকে।
খ. আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি
বর্তমানে বাংলাদেশ SAPTA, SAFTA, APTA, BIMSTEC, D-8, TPS-OIC-এর সদস্য। এসব চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে
গ. বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে উক্ত সংস্থার বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কার্যকর অংশগ্রহণ এবং স্বল্পোন্নত দেশসমূহের প্রতিনিধি হিসেবে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় এ দেশসমূহের একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কমিশন বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে অবদান রাখছে।
৭।ডাম্পিং ও বিদেশী পণ্যের আমদানি ও বিক্রয়ের ব্যাপারে অসাধু পন্থা প্রতিরোধকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ
ক. এন্টি-ডাম্পিং
বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা (WTO)Õর এ সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশে উৎপাদিত পণ্য দেশের স্বাভাবিক মূল্য (সাধারনত স্থানীয় বাজার মূল্য) অপেক্ষা কম মূল্যে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হলে সেই পণ্য বাংলাদেশে ডাম্পিং করা হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। কমিশন বিধি মোতাবেক ডাম্পকৃত পণ্য সনাক্তকরণ, শুল্কায়ন ও ডাম্পিং বিরোধী শুল্ক আদায় এবং স্বার্থহানি নিরূপণ করে।
খ. কাউন্টারভেইলিং
অনেক দেশই তাদের নিজস্ব শিল্পের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে শিল্প পণ্যে বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। যা বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরণের অসম প্রতিযোগিতা হতে স্থানীয় শিল্পকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বিধি মোতাবেক ভর্তুকিপ্রাপ্ত পণ্য সনাক্তকরণ ও শুল্কায়ন এবং কাউন্টারভেইলিং শুল্ক আদায়করণ এবং স্বার্থহানি নিরূপন করে।
গ. সেইফগার্ড
কোনো পণ্য আমদানির পরিমান যদি অপ্রত্যাশিত হারে বৃদ্ধি পায় তবে তা দেশীয় অনুরূপ পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বার্থহানির অথবা স্বার্থহানির হুমকির কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদনকারীদের ক্ষতির/লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে সাময়িক সংরক্ষণ ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সেইফগার্ড মেজারস গ্রহণ বা সেইফগার্ড শুল্ক আরোপ করে থাকে।