দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন
আজ ২৩ ডিসেম্বর’ ২০১৫ বুধবার সকাল ১০ টায় সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকায় দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষার্থে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের উদ্যোগে “এন্টি-ডাম্পিং, কাউন্টারভেইলিং এবং সেইফগার্ড মেজার্স” সংক্রান্ত দিনব্যপী একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় । সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও এফবিসিআই, ডিসিসিআইসহ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ এবং সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারগণ এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এনডিসি এবং এফবিসিসিআই- এর প্রেসিডেন্ট জনাব আবদুল মাতলুব আহমাদ বক্তব্য রাখেন।
মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেন যে, প্রতিটি দেশই শিল্প রক্ষার স্বার্থে কাজ করে থাকে। এ গতিধারায় বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশও দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সিমেন্ট, সিআর কয়েল, কাগজ ইত্যাদি শিল্পের উন্নয়নের বিষয় কর্মশালায় তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের জিএসপি ও রুলস অব অরিজিনের সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অতিসম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভুমিকা তুলে ধরেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।
মাননীয় মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক বণিজ্য চুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং শুল্ক কৌশল ইত্যাদি সম্পৃক্ত কাজের সাথে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ওতপ্রোতভাবে জড়িত । এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, অসাধু বাণিজ্য প্রতিকারের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ রক্ষার কাজে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন নিয়োজিত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সংশ্লিষ্ট চুক্তিসমূহের সাথে সঙ্গতি রেখে যথাযথ এন্টি-ডাম্পিং, কাউন্টারভেইলিং ডিউটি আরোপ ও সেইফগার্ড মেজার্স গ্রহণের সুপারিশ করার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোগকারী স্থানীয় শিল্পের আবেদন গ্রহণ এবং পরীক্ষা-পর্যালোচনা সাপেক্ষে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন যথার্থ সুপারিশ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট উপস্থাপন করে ।
বিশেষ অতিথি তার বক্তব্যে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার গতিধারা ব্যাখ্যা করেন। এন্টি-ডাম্পিং, কাউন্টার ভেইলিং ও সেইফগার্ড মেজার্স বিষয়ে আয়োজিত এ কর্মশালা হতে স্টেকহোল্ডাররা সচেতনতা আহরণের সুযোগ পাবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জনাব মাতলুব তার বক্তব্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দশম মিনিষ্টেরিয়াল কনফারেন্সে স্বল্পোন্নত দেশের অর্জন তুলে ধরেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, কর্মশালার বিষয়গুলো খুবই জটিল বিধায় দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষায় কিভাবে এসবের যথার্থ মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
কর্মশালায় তিনটি বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করা হয়: ১) এন্টি-ডাম্পিং ২) কাউন্টারভেইলিং ৩) সেইফগার্ড মেজার্স। এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক বিষয়ক বক্তব্য দেন কমিশনের উপ-প্রধান জনাব বেল্লাল হোসেন মোল্লা। তিনি দেশীয় রপ্তানিকৃত কোন পণ্যে কোন দেশ এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করলে অথবা বাংলাদেশে কোন দেশ ডাম্পড মূল্যে কোন পণ্য রপ্তানি করলে সেসব অসাধু ব্যবসার ক্ষেত্রে কিভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেসব বিষয়ে ডব্লিউটিও এর এন্টি-ডাম্পিং বিধি-বিধানসমূহ সম্পর্কে কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং এর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্টেকহোল্ডাদের নিকট হতে যেসব তথ্য/উপাত্তের প্রয়োজন হয় সেসব সরবরাহ করে কমিশনকে সহায়তা করতে অনুরোধ করেন।
কমিশনের যুগ্ম প্রধান বেগম রমা দেওয়ান কাউন্টারভেইলিং ও সেইফগার্ড মেজার্স বিষয়ক উপস্থাপনা পেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ হতে রপ্তানিকৃত কোন পণ্যে কাউন্টারভেইলিং ডিউটি আরোপ করলে অথবা কোন দেশ বাংলাদেশে সাবসিডাইজড মূল্যে কোন পণ্য রপ্তানি করলে এসব ক্ষেত্রে কিভাবে বাংলাদেশের শিল্পকে সংরক্ষণ করা যায় সেসব বিষয়ে কর্মশালায় ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং এতদ্বিষয়ে কমিশনকে প্রয়োজনীয় তথ্য/উপাত্ত দিয়ে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন। তাছাড়া, বাংলাদেশে কোন পণ্যের আমদানি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে গেলে তা প্রতিহত করার জন্য কিরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কেও আলোকপাত করেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার জন্য স্টেকহোল্ডারদের নিকট অনুরোধ জানান।
সবশেষে কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব এটিএম মুর্তজা রেজা চৌধুরী এনডিসি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, বাণিজ্য ও শুল্ক কৌশল সম্পর্কিত সুপারিশ/কৌশল পত্র তৈরীর জন্য কমিশনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন।