বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে তার সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের আওতায় অগ্রাধিকারমূলক বিভিন্ন সুবিধা অর্জন করে, যা বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। এদেশের জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রম, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা সর্বোপরি বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ উন্নয়ন সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে । যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘ নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং সে অনুযায়ী নির্ধারিত সূচকে নির্দিষ্ট মানদন্ড অর্জন করতে হয়। জাতিসংঘ ২০১৮-এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু জাতীয় আয় মার্কিন ডলার ১,২৩০ বা এর ঊর্ধ্বে (অথবা, শুধুমাত্র মাথাপিছু জাতীয় আয় মার্কিন ডলার ২,৪৬০ বা এর ঊর্ধ্বে); মানব সম্পদ সূচক (HAI) ৬৬ বা এর ঊর্ধ্বে; এবং অর্থনৈতিক সূচক ৩২ বা এর কম নির্ধারণ করেছে। উত্তরণের নিমিত্ত তিনটি সূচকের যে কোন দু’টি অর্জন করলেই চলে। কিন্তু আনন্দের সংবাদ এই যে, বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই নির্ধারিত মানদন্ড অতিক্রম করেছে এবং মানসমূহ যথাক্রমে-- মাথাপিছু জাতীয় আয় মার্কিন ডলার ১,২৭৪; মানব সম্পদ সূচক (HAI) ৭৩.২; এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক ২৫.২। জাতিসংঘের নিয়মানুসারে পরবর্তী দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় (২০২১, ২০২৪) বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক হলে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের গন্ডি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ আমাদের স্বপ্ন এবং আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার। তাই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। এর ফলে বাংলাদেশ দরিদ্র নয় বরং বিশ্ব পরিবারের একটি সম্মানিত ও আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছে। এটি মূলত আমাদের ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতি। তবে এ অর্জন টিকিয়ে রাখা এবং অব্যাহত গতিতে আরও এগিয়ে যাওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য আমাদের আরও পরিশ্রম ও সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে সুচিন্তিত ও প্রায়োগিক কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। সে লক্ষ্যে আমাদের দক্ষতা, সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত ও অবমাঠামোগত উন্নয়নসহ উন্নয়ন সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি একান্ত অপরিহার্য। তাহলে আমরা টিকে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে আরও বড় বড় সাফল্য অর্জনে সমর্থ হব।